ইব্রাহিম এর বাংলা ব্লগ এ www.ebrahi-mirzapur.blogspot.com এ স্বাগতম •
Saturday 5 November 2011
সত্যি ভূতের গল্প ,আসলেই।
ঘটনাটা আমার এক বড় ভাইয়ের মুখ থেকে শুনা,
সত্যি বলতেছি এজন্যে যে ,কারণ আমি বিশ্বাস করি ,উনি একজন শক্ত মনের মানুষ।এবং উনি যা দেখেছেন ,তা ঠিক দেখেছেন।ঘটনাটা এরকম,
উনার এস,এস,সি পরীক্ষা শেষ হয়েছে ।পরীক্ষার পর ছুটিতে উনি উনার
মামাবাড়ি খুলনায় যাবেন।উনি সিলেট থেকে রওয়ানা দিয়ে রাত সাড়েনটায় খুলনা পৌচ্ছান।শহর উনার মামাবাড়ি যাওয়ার রাস্তায় যাওয়ার পথে প্রায় ১০ মিনিটের মত টিলার মাঝখান দিয়ে যেতে হ্য়।রাতে তিনি কোন রিকশা না পেয়ে একাই হেটে রওয়ানা হন,একটু জায়গা যাওয়ার পর উনি উনার একটু সামনে একজন বৃদ্ধ লোককে দেখতে পান।
সামনে একজন লোক দেখায় উনি ভাবেন যে উনার সাথে কথা বলে বলে উনার মামাবাড়ি পরযন্ত চলে যাবেন। তাই উনি উনার হাটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে লোকটিকে ধরতে চান।কিন্তু লোকটিও ওর হাটার গতি বাড়িয়ে দেয়,এবং একটু পর রাস্তার একটি মোড় পার হয়ে যায়।
তখন তিনি ঐ মোড়ের কাছে এসে দেখেন যে, সামনে ঐ লোকটি নেই,এবং সামনে অনেকটা সরু রাস্তা যা একজন বৃদ্ধ লোকের পক্ষে এত তাড়াতাড়ি পেরোনো সম্ভব নয়।তাই উনি এদিক ওদিক তাকিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখেন লোকটি উনার ঠিক পেছনে এবং উনার দিকে তাকিয়ে হাসতেছে।লোকটি কিছুটা ভাসমান অবস্হায় ছিল, আর চোখটা খুবই ভীতিকর ছিল।উনার পিছনে লোকটিকে এভাবে দেখে উনি অজ্ঞান হয়ে
ঐখানেই পড়ে যান।
কিছুক্ষন পর একদল লোক এ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে উনাকে এভাব
পেয়ে উনার মামার বাড়ি পৌচ্ছে দেয়।
ভূত নিয়ে একটি সত্য ঘটনা…
যারা ভূতে বিশ্বাস করেন না, বা করতে চান না তাদেরকে আজকে একটা সত্য ঘটনা শুনাব-
আমি সবসময় ঢাকা থেকে রাত্রে বাড়িতে যায়। কারন ছুটি পাই কম আবার চিন্তা করি রাত্রে চলে গেলে পরদিন সকালটা বাসা থেকেই শুরু করা যাবে। ছাত্র অবস্থায় ক্লাস শেষ করেই রওনা হয়ে যেতাম। এখনও অফিস শেষ করেই সোজা মহাখালী – তারপর ময়মনসিংহ – হালুয়াঘাট। মোটামুটি ছয়ঘন্টা।
একদিন ক্লাস শেষ করে বাড়ী রওনা হলাম। আমাদের বাজারে যেতে যেতে রাত ১২ টা বেজে গেল। বাজারে গিয়ে দেখি সুবাস।আমার বাল্য বন্ধু। আমাকে দেখেই বলল আমরা তো প্রতিদিন রাত্রে কদমতলী আড্ডা মারি, তুই খেয়ে চলে আসিস
বাজারেই আমার বাসা। বাসায় গিয়ে আম্মার সাথে কথা বলতে বলতে খাওয়া শেষ করলাম।১টার দিকে বাজারে গিয়ে কাউকে না পেয়ে ভাবলাম সবাই হয়তো চলে গেছে। আমি দুইটা সিগারেট কিনে কদমতলী রওনা হলাম। বাজার থেকে কদমতলী সিকি কি.মি.।
তখন আষাঢ় মাস। আকাশে চাদও আছে। কিন্তু আষাঢ়ের মেঘ এবং চাদের আলো দু্ইটা মিলে একটা অদ্ভুদ আলো-আধারের খেলা চলছে- এই কালো অন্ধকার, আবার যেন ভরা পূর্ণিমা। একটা সিগারেট ধরিয়ে রাস্তা হাটছি। কিছুটা ভয়ও লাগছে। এমন রাতে একা একা হাটলে ভূত-প্রেতের কথা একটু বেশীই মনে পড়ে।
বামের ঘন জঙ্গল থেকে ঝি ঝি পোকার শব্দে একটা অদ্ভুদ সুর যেন সৃষ্টি হচ্ছে। যে সুরের তালে তালে নিজেকে নিয়ে খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে গভীর জঙ্গল থেকে দু-একটি কাক বড্ড বেসুরো কন্ঠে কা কা করছে। মনে হচ্ছে কোন মাংসখেকো রাক্ষস যেন কলিজাটা ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আমি কদমতলীর কাছাকাছি যে জায়গায় শশানঘাটটা ঠিক সে জায়গায় চলে আসলাম। এইখান থেকে আমাদের যে জায়গায় বসে আড্ডা দেওয়ার কথা সেই জায়গা টা স্পষ্ট দেখা যায়। আমি কাউকেই দেখতে পেলাম না। মনের ভিতর একটা ভয়ও জেগে উঠল। এই কারনে গভীর জঙ্গলের পাশ দেয়ে পিছনেও যেতে ইচ্ছে করছেনা। কারন এই জায়গার বামদিকে কংশ নদী, আর ডানদিকে খোলা মাঠ – যার ধরুন গা শিরশির করা অন্ধকার ভাবটা এইখানে নেই।
আমি সোজা কদমতলী গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে নদীর ঢেউ দেখছি। ভয়টা কাটানোর জন্য একটু জোড় করেই যেন অন্যমনস্ক হয়ে যেতে চাইলাম। মাঝে মাঝে কয়েকটা কলাগাছ নদী দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে কোন লাশ ভেসে যাচ্ছে। মৃত প্রাণীর গন্ধে বমি হওয়ার অবস্থা।
হঠাৎ……হঠাৎ………..একটি কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..। কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। আমার কাছ থেকে হাত বিশেক দূরে ঠিক আমার বাম দিকে তাকিয়ে দেখি একটি ঘোমটা দেওয়া মহিলা বসে আছে। আর ঐ খান থেকেই কান্নার আওয়াজ আসছে। ভয়ে আমার আত্না চলে যাওয়ার যোগাড়। শরীর দিয়ে ঘাম পানির মত বের হচ্ছে। যেন আমি কোন ঝড়নার নিচে দাড়িয়ে আছি। ডাকব ডাকব ভেবেও না ডেকে সোজা বাসার দিকে রওনা হলাম।
বাসায় গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে আম্মাকে সব ঘটনা খুলে বললে আম্মা বলল সুবাস তো ময়মনসিংহ গিয়েছিল তিনদিন আগে, সেতো আসবে আরও পরে। আমিতো অবাক তাহলে সুবাসের চেহারা নিয়ে আমাকে কে বলেছিল কদমতলী যাওয়ার জন্য।
শেষে আম্মা যা বলেছিল তা ছিল এইরকম-”৮৮ সালের বন্যার সময় নৌকায় করে বরযাত্রী বউ নিয়ে যাওয়ার সময় কদমতলী নৌকা ডুবে যায়। সবাই তীরে উঠলেও কনে আর উঠতে পারিনি। সেই থেকে এখনও মাঝে মাঝে কনেকে কদমতলী তে কাদতে দেখা যায়। আরও অনেকেই দেখেছে।”
আমি সবসময় ঢাকা থেকে রাত্রে বাড়িতে যায়। কারন ছুটি পাই কম আবার চিন্তা করি রাত্রে চলে গেলে পরদিন সকালটা বাসা থেকেই শুরু করা যাবে। ছাত্র অবস্থায় ক্লাস শেষ করেই রওনা হয়ে যেতাম। এখনও অফিস শেষ করেই সোজা মহাখালী – তারপর ময়মনসিংহ – হালুয়াঘাট। মোটামুটি ছয়ঘন্টা।
একদিন ক্লাস শেষ করে বাড়ী রওনা হলাম। আমাদের বাজারে যেতে যেতে রাত ১২ টা বেজে গেল। বাজারে গিয়ে দেখি সুবাস।আমার বাল্য বন্ধু। আমাকে দেখেই বলল আমরা তো প্রতিদিন রাত্রে কদমতলী আড্ডা মারি, তুই খেয়ে চলে আসিস
বাজারেই আমার বাসা। বাসায় গিয়ে আম্মার সাথে কথা বলতে বলতে খাওয়া শেষ করলাম।১টার দিকে বাজারে গিয়ে কাউকে না পেয়ে ভাবলাম সবাই হয়তো চলে গেছে। আমি দুইটা সিগারেট কিনে কদমতলী রওনা হলাম। বাজার থেকে কদমতলী সিকি কি.মি.।
তখন আষাঢ় মাস। আকাশে চাদও আছে। কিন্তু আষাঢ়ের মেঘ এবং চাদের আলো দু্ইটা মিলে একটা অদ্ভুদ আলো-আধারের খেলা চলছে- এই কালো অন্ধকার, আবার যেন ভরা পূর্ণিমা। একটা সিগারেট ধরিয়ে রাস্তা হাটছি। কিছুটা ভয়ও লাগছে। এমন রাতে একা একা হাটলে ভূত-প্রেতের কথা একটু বেশীই মনে পড়ে।
বামের ঘন জঙ্গল থেকে ঝি ঝি পোকার শব্দে একটা অদ্ভুদ সুর যেন সৃষ্টি হচ্ছে। যে সুরের তালে তালে নিজেকে নিয়ে খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে গভীর জঙ্গল থেকে দু-একটি কাক বড্ড বেসুরো কন্ঠে কা কা করছে। মনে হচ্ছে কোন মাংসখেকো রাক্ষস যেন কলিজাটা ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আমি কদমতলীর কাছাকাছি যে জায়গায় শশানঘাটটা ঠিক সে জায়গায় চলে আসলাম। এইখান থেকে আমাদের যে জায়গায় বসে আড্ডা দেওয়ার কথা সেই জায়গা টা স্পষ্ট দেখা যায়। আমি কাউকেই দেখতে পেলাম না। মনের ভিতর একটা ভয়ও জেগে উঠল। এই কারনে গভীর জঙ্গলের পাশ দেয়ে পিছনেও যেতে ইচ্ছে করছেনা। কারন এই জায়গার বামদিকে কংশ নদী, আর ডানদিকে খোলা মাঠ – যার ধরুন গা শিরশির করা অন্ধকার ভাবটা এইখানে নেই।
আমি সোজা কদমতলী গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে নদীর ঢেউ দেখছি। ভয়টা কাটানোর জন্য একটু জোড় করেই যেন অন্যমনস্ক হয়ে যেতে চাইলাম। মাঝে মাঝে কয়েকটা কলাগাছ নদী দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে কোন লাশ ভেসে যাচ্ছে। মৃত প্রাণীর গন্ধে বমি হওয়ার অবস্থা।
হঠাৎ……হঠাৎ………..একটি কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..। কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। আমার কাছ থেকে হাত বিশেক দূরে ঠিক আমার বাম দিকে তাকিয়ে দেখি একটি ঘোমটা দেওয়া মহিলা বসে আছে। আর ঐ খান থেকেই কান্নার আওয়াজ আসছে। ভয়ে আমার আত্না চলে যাওয়ার যোগাড়। শরীর দিয়ে ঘাম পানির মত বের হচ্ছে। যেন আমি কোন ঝড়নার নিচে দাড়িয়ে আছি। ডাকব ডাকব ভেবেও না ডেকে সোজা বাসার দিকে রওনা হলাম।
বাসায় গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে আম্মাকে সব ঘটনা খুলে বললে আম্মা বলল সুবাস তো ময়মনসিংহ গিয়েছিল তিনদিন আগে, সেতো আসবে আরও পরে। আমিতো অবাক তাহলে সুবাসের চেহারা নিয়ে আমাকে কে বলেছিল কদমতলী যাওয়ার জন্য।
শেষে আম্মা যা বলেছিল তা ছিল এইরকম-”৮৮ সালের বন্যার সময় নৌকায় করে বরযাত্রী বউ নিয়ে যাওয়ার সময় কদমতলী নৌকা ডুবে যায়। সবাই তীরে উঠলেও কনে আর উঠতে পারিনি। সেই থেকে এখনও মাঝে মাঝে কনেকে কদমতলী তে কাদতে দেখা যায়। আরও অনেকেই দেখেছে।”
মোল্লা বাড়ির ভূতেরা ভালো নেই
বাচ্চা ভূতটা হাড্ডিসার। মাথার খাপরি বের হয়ে এসেছে। চোখ দুটো গর্তে লুকানো। টর্চ লাইটের মতো তা ঠিকরে বের হচ্ছে। যেনো জয়নুলের দুর্ভিক্ষের সচল কোনো চিত্র। ‘আমরা এইহান থাইক্যা যাইগা মা’ বাচ্চা ভূত মা ভূতকে বলে।
‘যাবি’ বলে মা ভূতটা বিষন্ন দৃষ্টি মেলে।
মা ভূতটাও হাড়জিরজিরে। পাঁজরের সবগুলো হাড় গোনা যায়। পাটকাঠির মতো তা বের হয়ে আছে।
‘হ, যাইগ্যা। এইহানে আর থাকা যাইবো না। সব গাছ কাইট্যা ফালাইত্যাছে। সারারাত বিজলি বাতি জ্বলে। হ্যার জন্য রাইতে ঘর থাইক্যা বাইর হয়া যায় না। খাওয়া নাই।’
‘তর তো এইহানকার জন্য কোনো মায়া পয়দা হয় নাই। হেইদিন হইলি মাত্র। আমি কত বছর ধইর্যা এইহানে আছি। এই মায়া রাইখ্যা কই যামু, ক।’
‘নিশিবয়রা বিলে যাবি মা।’
‘হেইদিন দেখলি না, গোলাম জাইল্যা খালি হাতে ফিরলো। কোনো মাছ নাই বিলে। তাঁতের সুতার রঙের পানি গিয়া সব মাছ মাইর্যা ফালাইছে। বিলের মইধ্যে যে হিজল গাছটা আছিল, সেটাও মইরা গ্যাছে। ওইহানে গিয়া ক্যামনে থাকবি।’
‘মা, এইহানে আর ভালো লাগে না।’
‘তর দুঃখ বুঝি রে বাপ। তুই যে খেলবি, সেই গাছ নাই। বাঁশঝাড়টাও পাতলা হইয়া গ্যাছে। সব গাছ কাইট্যা ফেলছে মোল্লার পুত। আকন্দ বাড়ির মেছো ভূতরাও চইলা গ্যাছে। বড় একলা হইয়া গ্যাছোস তুই।’
‘মা, তুই এইহানে কবে আইছিলি।’
‘বোকা ছেলের কথা শোনো। এইহানে কী আমি আইছি। আমার তো জন্মই এইহানে। তর দাদার দাদা তারও দাদা প্রথম এইহানে আইছিলো। বাপের মুখে হুনছি, সে সময় কত গাছ আছিলো। বিরাট বিরাট সব গাছ। আম গাছ, তেঁতুল গাছ, শিমুল গাছ। একটা বিশাল বটগাছও আছিলো। যখন এইহানে আইছিলো তহন তো শাহজাদপুরে প্রজা বিদ্রোহ শুরু হইছে। কতকাল আগের কথা। সেই ব্রিটিশ আমল। জমিদাররা জমির খাজনা বাড়াইয়া দিছে। কৃষকরা কয়, তারা খাজনা বেশি দিবার পারবো না। এটা তাদের ওপর জুলুম হইছে। জমিদাররা করে কী, তাদের লাইঠাল বাহিনী দিয়া কৃষকদের মারধর করে। কৃষকরাও লাঠি হলঙ্গা নিয়া জমিদারদের মারবার যায়। তখন কৃষকগো দলের নেতা ক্ষুদি মোল্লা তাঁর দলবল নিয়া একবার এইহানে আছিলো। তহন এই জায়গাটা এমুন আছিলো না। গাছপালা দিয়া বিশাল আড়া হইয়া আছিলো। হ্যার জন্য দেখতে পায়নাই লাইঠালরা। কী সাহস আছিলো লোকটার।’
‘মা, তহন আমগো কি এতো কষ্ট আছিলো?’
‘তহন আমগো কত শান্তি আছিলো রে পুত!’
মট মট করে তেঁতুল গাছটা ভেঙ্গে পড়ে। কামলাদের শোরগোল শোনা যায়। মা আর বাচ্চা ভূতের শান্তি ভঙ্গ হয়। একটা কাকের বাসা ভেঙ্গে পড়লে মোক্তার মোল্লার নাতি আওয়াল কাকের বাসা থেকে সাবান, চুড়ি, এক টুকরো কাপড়ের সাথে একটি ডিম আবিস্কার করে। ডিমটি নিয়ে মোল্লার নাতি সবাইকে দেখাতে গেলে কাকটি তার পেছন পেছন ছোটে। আওয়াল এতে আরো বেশি আমোদ পায়।
এই তেঁতুল গাছটা কতদিনের পুরানো তা মা ভূতটাও মনে করতে পারে না। মানুষরা কত যে গল্প বলে এই গাছটি নিয়ে। এর কোনোটা সত্য, কোনোটা মিথ্যা। আবার কোনোটা সত্য-মিথ্যের মিশেল। তেঁতুল গাছটা নিয়া মানুষগো অভিযোগেরও অন্ত নাই। একবার বারেক মোল্লার বড় মাইয়া আলেয়া পোয়াতি হইয়া বাড়িতে আইলো। তহন জ্যৈষ্ঠ মাস। কয়েকদিন পর আলেয়া এক কটকটে দুপুরে একটা মরা মাইয়া বিয়াইলো। আলেয়ার জামাই ওয়াদুদ মিয়া সব দোষ দিলো তেঁতুল গাছের ভূতের। শাহপুর মাদ্রাসার বড় হুজুর এসে মন্ত্র পড়া দিলো। মন্ত্র দিলে কী হবে, ভূতেরা তো আর কিছু করে নাই। বড় হুজুর এসে খালি খালি কয়েকদিন ভূতদের কষ্ট দিলো।
হেইবার-ই কে যেন কইছিলো তেঁতুল গাছটি কেটে ফেলতে। গাছ কাটলে ভূতেরা যদি ক্ষেইপ্যা যায়, সেই ভয়ে কেউ কাটতে সাহস পায় নাই। কেউ কেউ মনে করতো, গাছে যে প্রথম কোপটি দিবে, তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মইরা যাবে। হ্যার জন্য কেউ এতোদিন কাটতে রাজি হয় নাই। কিন্তু বাতেন মোল্লার ছেলে সোহেল শহরে শিক্ষিত ছেলে। ভূত-প্রেতে তার বিশ্বাস নাই। সেই আজকে কাইট্যা ফেললো তেঁতুল গাছটি।
সোহেল হয়তো তেঁতুল গাছটি কাটতো না। ভূত-প্রেতে ভয় না পেলেও ছোটবেলা থেকে তেঁতুল গাছের ভূত সম্পর্কে এতো কিছু শুনে এসেছে যে তাতে তেঁতুল গাছটি কাটতে গেলে তাকে দুইবার ভাবতে হতো। কিন্তু গত সপ্তাহের একটি ঘটনা তাকে কাটতে অনেকটা বাধ্যই করলো। গত সপ্তাহে বউরে নিয়ে গেছিলো আকতার ফার্নিচার্সে। উদ্দেশ্য ছিল একটা ড্রেসিং টেবিল কিনবেন। কিন্তু বউ একটা খাট পছন্দ করে ফেললো। দাম সাকূল্যে ৫৫ হাজার টাকা। বউয়ের গোঁ, এই খাট কিনা দিতে হইবো। একটু কষ্ট হলেও খাট কেনার সামর্থ্য সোহেলের আছে। কিন্তু সোহেল বউয়ের সব কথা শোনার মতো বোকা নয়। মনে মনে বুদ্ধি আঁটলো, গ্রামের বাড়ির তেঁতুল গাছটি কেটে এই ডিজাইনের একটা খাট বউকে বানিয়ে দেবে।
সোহেল শহর থেকে এসে যেদিন বলল, তেঁতুল গাছটি কেটে খাট বানাবে, ওয়্যারর্ডোব বানাবে, সে দিন তার দাদী জাহানারা বেগম ভয়ে আঁতকে উঠলেন। অনেক করে বোঝালেন তার বেয়াড়া নাতিকে। বললেন, তেঁতুল গাছের ভূতটা ভালো না। সংসারে অনিষ্ট করবে। সোহেল শুনে নাই দাদীর কথা। মনে মনে ভেবেছে, খাট না বানালে সংসারে এমনিতেই অশান্তি আসবে।
গাছ কাটা শেষ হলে করাতকলে তা চেরাইও করা হয়। এইবার খাট বানাতে হবে। সোহেল আকতার ফার্নিচার্সের ডিজাইন পকেটে নিয়ে ঘোরে। আর খুঁজতে থাকে কে বানিয়ে দিতে পারবে এরকম খাট। এই খুঁজতে গিয়েই সোহেলের পরিচয় হয় লিটন সূত্রধরের সাথে। লিটন সূত্রধর সোহাগপুর হাটের পূর্ণিমা ফার্নিচার্সের মালিক। ‘আসমান থাইক্যা ডিজাইন আইনা দিলেও এই বান্দা আপনার মাল রাইত পোহাইলেই ডেলিভারি দিবো। তয়, আপনার বুদ্ধির প্রশংসা করতেই হয়- তেঁতুল গাছের কাঠ বহুত ভালো কাঠ। মাগার আপনের পোলাও ঘুণে ধরা ছাড়া পার কইরা দিবো।’
লিটন ছুতারের কথা শুনে সোহেলের আফসানার কথা মনে পড়ে। একসাথে খাট, ওয়্যারডোর্ব দেখলে আফসানা সত্যিই খুব খুশি হবে। মনের কোণে আফসানার হাসিমুখের ছবি ভেসে উঠতে দেখে সোহেলেরও খুব ভালো লাগে। তার মনে হয় তেঁতুল গাছের কাঠের মতো তাদের সংসার যেন টেকসই হচ্ছে!
‘যাবি’ বলে মা ভূতটা বিষন্ন দৃষ্টি মেলে।
মা ভূতটাও হাড়জিরজিরে। পাঁজরের সবগুলো হাড় গোনা যায়। পাটকাঠির মতো তা বের হয়ে আছে।
‘হ, যাইগ্যা। এইহানে আর থাকা যাইবো না। সব গাছ কাইট্যা ফালাইত্যাছে। সারারাত বিজলি বাতি জ্বলে। হ্যার জন্য রাইতে ঘর থাইক্যা বাইর হয়া যায় না। খাওয়া নাই।’
‘তর তো এইহানকার জন্য কোনো মায়া পয়দা হয় নাই। হেইদিন হইলি মাত্র। আমি কত বছর ধইর্যা এইহানে আছি। এই মায়া রাইখ্যা কই যামু, ক।’
‘নিশিবয়রা বিলে যাবি মা।’
‘হেইদিন দেখলি না, গোলাম জাইল্যা খালি হাতে ফিরলো। কোনো মাছ নাই বিলে। তাঁতের সুতার রঙের পানি গিয়া সব মাছ মাইর্যা ফালাইছে। বিলের মইধ্যে যে হিজল গাছটা আছিল, সেটাও মইরা গ্যাছে। ওইহানে গিয়া ক্যামনে থাকবি।’
‘মা, এইহানে আর ভালো লাগে না।’
‘তর দুঃখ বুঝি রে বাপ। তুই যে খেলবি, সেই গাছ নাই। বাঁশঝাড়টাও পাতলা হইয়া গ্যাছে। সব গাছ কাইট্যা ফেলছে মোল্লার পুত। আকন্দ বাড়ির মেছো ভূতরাও চইলা গ্যাছে। বড় একলা হইয়া গ্যাছোস তুই।’
‘মা, তুই এইহানে কবে আইছিলি।’
‘বোকা ছেলের কথা শোনো। এইহানে কী আমি আইছি। আমার তো জন্মই এইহানে। তর দাদার দাদা তারও দাদা প্রথম এইহানে আইছিলো। বাপের মুখে হুনছি, সে সময় কত গাছ আছিলো। বিরাট বিরাট সব গাছ। আম গাছ, তেঁতুল গাছ, শিমুল গাছ। একটা বিশাল বটগাছও আছিলো। যখন এইহানে আইছিলো তহন তো শাহজাদপুরে প্রজা বিদ্রোহ শুরু হইছে। কতকাল আগের কথা। সেই ব্রিটিশ আমল। জমিদাররা জমির খাজনা বাড়াইয়া দিছে। কৃষকরা কয়, তারা খাজনা বেশি দিবার পারবো না। এটা তাদের ওপর জুলুম হইছে। জমিদাররা করে কী, তাদের লাইঠাল বাহিনী দিয়া কৃষকদের মারধর করে। কৃষকরাও লাঠি হলঙ্গা নিয়া জমিদারদের মারবার যায়। তখন কৃষকগো দলের নেতা ক্ষুদি মোল্লা তাঁর দলবল নিয়া একবার এইহানে আছিলো। তহন এই জায়গাটা এমুন আছিলো না। গাছপালা দিয়া বিশাল আড়া হইয়া আছিলো। হ্যার জন্য দেখতে পায়নাই লাইঠালরা। কী সাহস আছিলো লোকটার।’
‘মা, তহন আমগো কি এতো কষ্ট আছিলো?’
‘তহন আমগো কত শান্তি আছিলো রে পুত!’
মট মট করে তেঁতুল গাছটা ভেঙ্গে পড়ে। কামলাদের শোরগোল শোনা যায়। মা আর বাচ্চা ভূতের শান্তি ভঙ্গ হয়। একটা কাকের বাসা ভেঙ্গে পড়লে মোক্তার মোল্লার নাতি আওয়াল কাকের বাসা থেকে সাবান, চুড়ি, এক টুকরো কাপড়ের সাথে একটি ডিম আবিস্কার করে। ডিমটি নিয়ে মোল্লার নাতি সবাইকে দেখাতে গেলে কাকটি তার পেছন পেছন ছোটে। আওয়াল এতে আরো বেশি আমোদ পায়।
এই তেঁতুল গাছটা কতদিনের পুরানো তা মা ভূতটাও মনে করতে পারে না। মানুষরা কত যে গল্প বলে এই গাছটি নিয়ে। এর কোনোটা সত্য, কোনোটা মিথ্যা। আবার কোনোটা সত্য-মিথ্যের মিশেল। তেঁতুল গাছটা নিয়া মানুষগো অভিযোগেরও অন্ত নাই। একবার বারেক মোল্লার বড় মাইয়া আলেয়া পোয়াতি হইয়া বাড়িতে আইলো। তহন জ্যৈষ্ঠ মাস। কয়েকদিন পর আলেয়া এক কটকটে দুপুরে একটা মরা মাইয়া বিয়াইলো। আলেয়ার জামাই ওয়াদুদ মিয়া সব দোষ দিলো তেঁতুল গাছের ভূতের। শাহপুর মাদ্রাসার বড় হুজুর এসে মন্ত্র পড়া দিলো। মন্ত্র দিলে কী হবে, ভূতেরা তো আর কিছু করে নাই। বড় হুজুর এসে খালি খালি কয়েকদিন ভূতদের কষ্ট দিলো।
হেইবার-ই কে যেন কইছিলো তেঁতুল গাছটি কেটে ফেলতে। গাছ কাটলে ভূতেরা যদি ক্ষেইপ্যা যায়, সেই ভয়ে কেউ কাটতে সাহস পায় নাই। কেউ কেউ মনে করতো, গাছে যে প্রথম কোপটি দিবে, তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মইরা যাবে। হ্যার জন্য কেউ এতোদিন কাটতে রাজি হয় নাই। কিন্তু বাতেন মোল্লার ছেলে সোহেল শহরে শিক্ষিত ছেলে। ভূত-প্রেতে তার বিশ্বাস নাই। সেই আজকে কাইট্যা ফেললো তেঁতুল গাছটি।
সোহেল হয়তো তেঁতুল গাছটি কাটতো না। ভূত-প্রেতে ভয় না পেলেও ছোটবেলা থেকে তেঁতুল গাছের ভূত সম্পর্কে এতো কিছু শুনে এসেছে যে তাতে তেঁতুল গাছটি কাটতে গেলে তাকে দুইবার ভাবতে হতো। কিন্তু গত সপ্তাহের একটি ঘটনা তাকে কাটতে অনেকটা বাধ্যই করলো। গত সপ্তাহে বউরে নিয়ে গেছিলো আকতার ফার্নিচার্সে। উদ্দেশ্য ছিল একটা ড্রেসিং টেবিল কিনবেন। কিন্তু বউ একটা খাট পছন্দ করে ফেললো। দাম সাকূল্যে ৫৫ হাজার টাকা। বউয়ের গোঁ, এই খাট কিনা দিতে হইবো। একটু কষ্ট হলেও খাট কেনার সামর্থ্য সোহেলের আছে। কিন্তু সোহেল বউয়ের সব কথা শোনার মতো বোকা নয়। মনে মনে বুদ্ধি আঁটলো, গ্রামের বাড়ির তেঁতুল গাছটি কেটে এই ডিজাইনের একটা খাট বউকে বানিয়ে দেবে।
সোহেল শহর থেকে এসে যেদিন বলল, তেঁতুল গাছটি কেটে খাট বানাবে, ওয়্যারর্ডোব বানাবে, সে দিন তার দাদী জাহানারা বেগম ভয়ে আঁতকে উঠলেন। অনেক করে বোঝালেন তার বেয়াড়া নাতিকে। বললেন, তেঁতুল গাছের ভূতটা ভালো না। সংসারে অনিষ্ট করবে। সোহেল শুনে নাই দাদীর কথা। মনে মনে ভেবেছে, খাট না বানালে সংসারে এমনিতেই অশান্তি আসবে।
গাছ কাটা শেষ হলে করাতকলে তা চেরাইও করা হয়। এইবার খাট বানাতে হবে। সোহেল আকতার ফার্নিচার্সের ডিজাইন পকেটে নিয়ে ঘোরে। আর খুঁজতে থাকে কে বানিয়ে দিতে পারবে এরকম খাট। এই খুঁজতে গিয়েই সোহেলের পরিচয় হয় লিটন সূত্রধরের সাথে। লিটন সূত্রধর সোহাগপুর হাটের পূর্ণিমা ফার্নিচার্সের মালিক। ‘আসমান থাইক্যা ডিজাইন আইনা দিলেও এই বান্দা আপনার মাল রাইত পোহাইলেই ডেলিভারি দিবো। তয়, আপনার বুদ্ধির প্রশংসা করতেই হয়- তেঁতুল গাছের কাঠ বহুত ভালো কাঠ। মাগার আপনের পোলাও ঘুণে ধরা ছাড়া পার কইরা দিবো।’
লিটন ছুতারের কথা শুনে সোহেলের আফসানার কথা মনে পড়ে। একসাথে খাট, ওয়্যারডোর্ব দেখলে আফসানা সত্যিই খুব খুশি হবে। মনের কোণে আফসানার হাসিমুখের ছবি ভেসে উঠতে দেখে সোহেলেরও খুব ভালো লাগে। তার মনে হয় তেঁতুল গাছের কাঠের মতো তাদের সংসার যেন টেকসই হচ্ছে!
Sunday 30 October 2011
Friday 28 October 2011
ভূতের ভয়
রাতের গল্প
গল্প বলা যাবে কিনা একে এখন আমি সন্দিহান। কারণ অনেকের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত সাধারন একজনের কিছু একান্ত মানসিকতার অভিব্যক্তি। হয়তো আমার লেখার নবীনতার কারণে অস্পষ্টরূপ ধারণ করেছে। তবু বাকি অংশটি সাহস করে দিয়ে দিলাম।
ছায়াসঙ্গী---খ
ছেলেবেলা থেকে ভূতের ভয় ওর। মা বাবা ভাই বোন সবাই জানে। ছেলেবেলায় যেখানে ভরসার ছাদ হয়ে দেখা দিত পরিজনেরা। তা ক্রমাগতই ওদের কাছে বিরক্তিতে পরিণত হয়েছে কালে কালে । এখন ভয়ের কথা শুনে কেউ হাসে----- কেউ বা ধমকায়-------- কেউ বিরক্তিতে নাক বেঁকিয়ে বলে ন্যাঁকা। সব উপহাস সহ্য করে রাত্রির জমকালো অন্ধকারে আকুতি নিয়ে অপেক্ষা করে কারও পাশে এসে শোয়ার। বাড়িতে থাকতে মায়ের পাশের জায়গা দখল করে বাবাকে বসবার ঘরে বিতাড়িত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার ইচ্ছা আর শক্তি নিয়ে ঢাকায় এসে বড়বোনের বাসায় উঠেছে। আর শুরু হয়েছে একের পর এক ঝামেলা। বড়বোনের ছেলে মেয়েগুলো এ্যাডাল্ট হয়ে যাবার পর একা শুতেই বেশি ভালবাসে। রুম শেয়ার করলেও বিছানা শেয়ার করাটা ওদের কাছে চরম বিরক্তির। খালামনি আপন হলেও ওর সাথে শোয়া? বিরক্তিতে ভ্রু কুচকায় রিয়া। বিশাল বাড়িতে যাদের দুই দুইটা রুম খালি পড়ে থাকে তাদের কাছে বিরক্তিটা অস্বাভাবিক নয় তা বেশ ভাল করেই বোঝে রায়না। কিন্তু --------।
ক’দিন ধরে রায়নার ঘুম হারাম। রিয়া হঠাৎ স্কলারশিপ পেয়ে গেছে। সবার আনন্দের মাঝে ওর বুক দিয়ে শীতল স্রোত নেমে গেছে। ঠিক করে আর এ বাড়িতে আর নয়। রিয়া দেশের বাইরে চলে যায় একসময়। একাকী রাত কাঁটাবার ভয়ে হলমুখো হয় রায়না। হলে গিয়ে আরেক ঝক্কি তে পড়ে। ছোট খাটে ডাবলিং করে থাকাটা হলের মেয়েদের কাছে এ্যাবসার্ড একটা ব্যাপার। তবু রাত্রি নামার সাথে সাথে যেন পাগলামো বাড়ে রায়না। শুধু নিজের রুমই নয়------ বন্ধু------- বন্ধুর বন্ধু-----তাদের কাছে গিয়ে গল্প করার ছলে একসাথে থাকার আবদারে ওকেই ভয় পেতে শুরু করেছে সবাই। আড়ালে ওরা কি সব বলে বলে মুখ টিপে হাসে আর সামনে সামনে বলে
তোমার বিয়ে প্রয়োজন আসলে----- সাইকোলজিতে পড়------ এ কথা উদ্ধার করতে পারনি?
আঘাত পেলেও মেনে নিয়ে পুনরায় ওর শকুন চোখ আতিপাতি করে খুঁজতে থাকে কারও পাশে থাকার এক চিলতে জায়গা। এরমাঝে হলের এক ঘটনাবহুল অধ্যায় পুনরায় ওকে বাধ্য করে বোনের বাড়ির আশ্রয় নিয়ে থাকতে।
একরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। পেটের তলায় তীব্র চাপে নতি স্বীকার করে আস্তে করে উঠে। সশব্দে বিছানা থেকে নামে। যেন ওর শব্দের গমকে অন্যের ঘুম ভাঙে। আশাতীত ভাবে পাশে শোয়া শিউলি নড়েচড়ে শোয়। এটুকু অবলম্বন করে সাহসে বুক বাঁধে। আলতো করে হেঁটে যায় বাথরুমের গেটে। বাথরুমের লাইটের সাথে ঘরের লাইটও জ্বালায় হাত বাড়িয়ে। পাশের বেডের রাবেয়া জেগে বিরক্তিতে লাইট নেভাতে বলে। পাংশু মুখ আর ভয়ার্ত হাতে ঘরের লাইট বন্ধ করে। দরজা খুলেই বাথরুমে গিয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে কম সময়ের মাঝে বেরিয়ে হুড়মুড়িয়ে ঘরে আসতে গিয়ে অনুভব করে এক বাঁধন। ঠিক গলার কাছটায়। তীব্র চমকে হাত বাড়িয়ে সরাতে গিয়ে টের পায় অনড় বাঁধনটি। হৃৎপিন্ডের স্বপ্রনোদিত চাহিদায় নিঃশ্বাসের সাথে সাথে যেন দৃষ্টিও ফিরে আসে রায়নার। বোঝে যে মশারির দড়ি। মাথা নামিয়ে বিছানার কাছে আসতেই হোঁচটÑ ধাক্কা লাগে শিউলির গায়ে। আচমকা ঘুমে এ ধাক্কা শিউলির গলা চিড়ে সামান্য শব্দ বের করতেই রায়নার অনুভবে আসে অশরীরি আত্মার উপস্থিতি। যে ঠিক পেছনে। তীব্র আর তীক্ষè চিৎকারে পুরো হল কেঁপে ওঠে। অন্ধকার ঘরে শিউলি উঠে বসে দেখে রায়নার ফেনা তোলা মুখ। ছিটকে উঠে লাইট জ্বালায়। একের পর এক ফর্মালিটি পার হয়ে রায়নার গন্তব্য স্থল নির্দিষ্ট হয় বোনের বাসায়।
বাসায় আসতেই ওর চেয়ে পনের বছরের ছোট ভাতিজার দাঁত কপাটি বের করা হাসির বিদ্রুপ বাণ ক্ষত করে রায়নাকে। বোনের বকা-------- দুলাভাইয়ের অভয় দেয়া হাসি বিষদাঁত হয়ে ওকে ক্রমাগত রক্তাক্ত করতে থাকে। একা থাকার পরিকল্পনা নেয় রাত্রি বেলা। মধ্য রাতেই এর পরিণাম টের পায় বাড়ির লোকজন। পরদিন বোন বিরক্তমুখে হুজুরের বাড়ির তাবিজ হাজির করে রায়নার সামনে। স্মার্ট রায়না লুকিয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়। দুলাভাই উপদেশ দেয় ডাক্তারবাড়ি যাবার। কিন্তু উপদেশ পর্যন্তই। কেউ আর মাথা ঘামায় না বিষয়টা নিয়ে। সামান্য এক ভূতের ভয়---- ছোঃ-------।
প্রকৃতির বিধান মেনে সারাদিনের আলোকোজ্জ্বল দিন শেষে আরও রাত নামে। জমাট অন্ধকার আর ঐ হতচ্ছারা চাঁদকে ভেংচি কেঁটে ঘরের জানালাগুলোয় হাত বাড়ায় রায়না বরাবরের মতন। ঠিক ঐখানেই কে যেন হাসছে-------- ওরা কি দু’জন---- তিনজ’ন না দশজন------ আর ভাবতে চায় না রায়না। ঠাস ঠাস শব্দে বন্ধ করে জানালা। ঘাড়ের খুব কাছে কার যেন নিঃশ্বাস। আলোর নগরী-----জেগে থাকা অনেক মানুষের উপস্থিতিতে পিছু তাঁকায় রায়না। কোথাও কেউ নেই ------- শুধু শূন্যতার বাতাস ছাড়া। বেরিয়ে এসে এক রুম থেকে আরেক রুমে যেতে যেতে রায়নার চেতনা জানায় করিডোরে কে হাঁটে------- ও নাকি ওরা? থমকানো মন আর চমকানো মুখ কোনভাবে তাঁকিয়ে দেখতে পারে না প্রকৃতির সত্যটাকে। অথর্ব আর ক্লান্ত মন অসহায় আক্রোশে ক্রুদ্ধ গর্জন করতে থাকে। যে গর্জন কেউ দেখে না। অসম্ভব শান্ত মুখের চোখ দু’টি শুধু জান্তব কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়ায়------ যেখানে ভয়ের কাছে পরাজিত গ্লানি------ চারপাশের চাপা হাসির কুন্ঠিত অবয়ব--------- ভয়ংকর মূহুর্তের উৎকন্ঠা -------- স্রষ্টার প্রতি ঘৃণা আর নিজের প্রতি ক্রোধের আক্রোশ!
পনের বছরের ছোট রিমোর দরজার সামনে লজ্জিত---হীন--------কুঞ্চিত রায়না চেতনার অলীক মিথ্যার সত্যকে জেনেও এসে দাঁড়ায় রাত্রিকালে।
‘প্লিজ একটু শুই তোর পাশে আজ রাতে------- কাল ডিস্টার্ব করব না------ প্লিজ--------!’
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ছায়াসঙ্গী---খ
ছেলেবেলা থেকে ভূতের ভয় ওর। মা বাবা ভাই বোন সবাই জানে। ছেলেবেলায় যেখানে ভরসার ছাদ হয়ে দেখা দিত পরিজনেরা। তা ক্রমাগতই ওদের কাছে বিরক্তিতে পরিণত হয়েছে কালে কালে । এখন ভয়ের কথা শুনে কেউ হাসে----- কেউ বা ধমকায়-------- কেউ বিরক্তিতে নাক বেঁকিয়ে বলে ন্যাঁকা। সব উপহাস সহ্য করে রাত্রির জমকালো অন্ধকারে আকুতি নিয়ে অপেক্ষা করে কারও পাশে এসে শোয়ার। বাড়িতে থাকতে মায়ের পাশের জায়গা দখল করে বাবাকে বসবার ঘরে বিতাড়িত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার ইচ্ছা আর শক্তি নিয়ে ঢাকায় এসে বড়বোনের বাসায় উঠেছে। আর শুরু হয়েছে একের পর এক ঝামেলা। বড়বোনের ছেলে মেয়েগুলো এ্যাডাল্ট হয়ে যাবার পর একা শুতেই বেশি ভালবাসে। রুম শেয়ার করলেও বিছানা শেয়ার করাটা ওদের কাছে চরম বিরক্তির। খালামনি আপন হলেও ওর সাথে শোয়া? বিরক্তিতে ভ্রু কুচকায় রিয়া। বিশাল বাড়িতে যাদের দুই দুইটা রুম খালি পড়ে থাকে তাদের কাছে বিরক্তিটা অস্বাভাবিক নয় তা বেশ ভাল করেই বোঝে রায়না। কিন্তু --------।
ক’দিন ধরে রায়নার ঘুম হারাম। রিয়া হঠাৎ স্কলারশিপ পেয়ে গেছে। সবার আনন্দের মাঝে ওর বুক দিয়ে শীতল স্রোত নেমে গেছে। ঠিক করে আর এ বাড়িতে আর নয়। রিয়া দেশের বাইরে চলে যায় একসময়। একাকী রাত কাঁটাবার ভয়ে হলমুখো হয় রায়না। হলে গিয়ে আরেক ঝক্কি তে পড়ে। ছোট খাটে ডাবলিং করে থাকাটা হলের মেয়েদের কাছে এ্যাবসার্ড একটা ব্যাপার। তবু রাত্রি নামার সাথে সাথে যেন পাগলামো বাড়ে রায়না। শুধু নিজের রুমই নয়------ বন্ধু------- বন্ধুর বন্ধু-----তাদের কাছে গিয়ে গল্প করার ছলে একসাথে থাকার আবদারে ওকেই ভয় পেতে শুরু করেছে সবাই। আড়ালে ওরা কি সব বলে বলে মুখ টিপে হাসে আর সামনে সামনে বলে
তোমার বিয়ে প্রয়োজন আসলে----- সাইকোলজিতে পড়------ এ কথা উদ্ধার করতে পারনি?
আঘাত পেলেও মেনে নিয়ে পুনরায় ওর শকুন চোখ আতিপাতি করে খুঁজতে থাকে কারও পাশে থাকার এক চিলতে জায়গা। এরমাঝে হলের এক ঘটনাবহুল অধ্যায় পুনরায় ওকে বাধ্য করে বোনের বাড়ির আশ্রয় নিয়ে থাকতে।
একরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। পেটের তলায় তীব্র চাপে নতি স্বীকার করে আস্তে করে উঠে। সশব্দে বিছানা থেকে নামে। যেন ওর শব্দের গমকে অন্যের ঘুম ভাঙে। আশাতীত ভাবে পাশে শোয়া শিউলি নড়েচড়ে শোয়। এটুকু অবলম্বন করে সাহসে বুক বাঁধে। আলতো করে হেঁটে যায় বাথরুমের গেটে। বাথরুমের লাইটের সাথে ঘরের লাইটও জ্বালায় হাত বাড়িয়ে। পাশের বেডের রাবেয়া জেগে বিরক্তিতে লাইট নেভাতে বলে। পাংশু মুখ আর ভয়ার্ত হাতে ঘরের লাইট বন্ধ করে। দরজা খুলেই বাথরুমে গিয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে কম সময়ের মাঝে বেরিয়ে হুড়মুড়িয়ে ঘরে আসতে গিয়ে অনুভব করে এক বাঁধন। ঠিক গলার কাছটায়। তীব্র চমকে হাত বাড়িয়ে সরাতে গিয়ে টের পায় অনড় বাঁধনটি। হৃৎপিন্ডের স্বপ্রনোদিত চাহিদায় নিঃশ্বাসের সাথে সাথে যেন দৃষ্টিও ফিরে আসে রায়নার। বোঝে যে মশারির দড়ি। মাথা নামিয়ে বিছানার কাছে আসতেই হোঁচটÑ ধাক্কা লাগে শিউলির গায়ে। আচমকা ঘুমে এ ধাক্কা শিউলির গলা চিড়ে সামান্য শব্দ বের করতেই রায়নার অনুভবে আসে অশরীরি আত্মার উপস্থিতি। যে ঠিক পেছনে। তীব্র আর তীক্ষè চিৎকারে পুরো হল কেঁপে ওঠে। অন্ধকার ঘরে শিউলি উঠে বসে দেখে রায়নার ফেনা তোলা মুখ। ছিটকে উঠে লাইট জ্বালায়। একের পর এক ফর্মালিটি পার হয়ে রায়নার গন্তব্য স্থল নির্দিষ্ট হয় বোনের বাসায়।
বাসায় আসতেই ওর চেয়ে পনের বছরের ছোট ভাতিজার দাঁত কপাটি বের করা হাসির বিদ্রুপ বাণ ক্ষত করে রায়নাকে। বোনের বকা-------- দুলাভাইয়ের অভয় দেয়া হাসি বিষদাঁত হয়ে ওকে ক্রমাগত রক্তাক্ত করতে থাকে। একা থাকার পরিকল্পনা নেয় রাত্রি বেলা। মধ্য রাতেই এর পরিণাম টের পায় বাড়ির লোকজন। পরদিন বোন বিরক্তমুখে হুজুরের বাড়ির তাবিজ হাজির করে রায়নার সামনে। স্মার্ট রায়না লুকিয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়। দুলাভাই উপদেশ দেয় ডাক্তারবাড়ি যাবার। কিন্তু উপদেশ পর্যন্তই। কেউ আর মাথা ঘামায় না বিষয়টা নিয়ে। সামান্য এক ভূতের ভয়---- ছোঃ-------।
প্রকৃতির বিধান মেনে সারাদিনের আলোকোজ্জ্বল দিন শেষে আরও রাত নামে। জমাট অন্ধকার আর ঐ হতচ্ছারা চাঁদকে ভেংচি কেঁটে ঘরের জানালাগুলোয় হাত বাড়ায় রায়না বরাবরের মতন। ঠিক ঐখানেই কে যেন হাসছে-------- ওরা কি দু’জন---- তিনজ’ন না দশজন------ আর ভাবতে চায় না রায়না। ঠাস ঠাস শব্দে বন্ধ করে জানালা। ঘাড়ের খুব কাছে কার যেন নিঃশ্বাস। আলোর নগরী-----জেগে থাকা অনেক মানুষের উপস্থিতিতে পিছু তাঁকায় রায়না। কোথাও কেউ নেই ------- শুধু শূন্যতার বাতাস ছাড়া। বেরিয়ে এসে এক রুম থেকে আরেক রুমে যেতে যেতে রায়নার চেতনা জানায় করিডোরে কে হাঁটে------- ও নাকি ওরা? থমকানো মন আর চমকানো মুখ কোনভাবে তাঁকিয়ে দেখতে পারে না প্রকৃতির সত্যটাকে। অথর্ব আর ক্লান্ত মন অসহায় আক্রোশে ক্রুদ্ধ গর্জন করতে থাকে। যে গর্জন কেউ দেখে না। অসম্ভব শান্ত মুখের চোখ দু’টি শুধু জান্তব কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়ায়------ যেখানে ভয়ের কাছে পরাজিত গ্লানি------ চারপাশের চাপা হাসির কুন্ঠিত অবয়ব--------- ভয়ংকর মূহুর্তের উৎকন্ঠা -------- স্রষ্টার প্রতি ঘৃণা আর নিজের প্রতি ক্রোধের আক্রোশ!
পনের বছরের ছোট রিমোর দরজার সামনে লজ্জিত---হীন--------কুঞ্চিত রায়না চেতনার অলীক মিথ্যার সত্যকে জেনেও এসে দাঁড়ায় রাত্রিকালে।
‘প্লিজ একটু শুই তোর পাশে আজ রাতে------- কাল ডিস্টার্ব করব না------ প্লিজ--------!’
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
Sunday 23 October 2011
ভূতের গল্প
এক জোলা ছিল সে পিঠে খেতে বড় ভালবাসত।
একদিন সে তার মাকে বলল, ‘মা, আমার বড্ড পিঠে খেতে ইচ্ছে করছে,আমাকে পিঠে করে দাও।’
সেইদিন তার মা তাকে লাল-লাল, গোল-গোল, চ্যাপটা-চ্যাপটা সাতখানি চমৎকার পিঠে করে দিল। জোলা সেই পিঠে পেয়ে ভারি খুশি হয়ে নাচতে লাগল আর বলতে লাগল,
‘একটা খাব, দুটো খাব, সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’
জোলার মা বলল, ‘খালি নাচবিই যদি, তবে খাবি কখন?’
জোলা বলল, ‘খাব কি এখানে? সবাই যেখানে দেখতে পাবে, সেখানে গিয়ে খাব।’ ব’লে জোলা পিঠেগুলি নিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি থেকে গেল, বলতে লাগল,
‘একটা খাব, দুটো খাব, সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’
নাচতে নাচতে জোলা একেবারে সেই বটগাছতলায় চলে এল, যেখানে হাট হয়। সেই গাছের তলায় এসে সে খালি নাচছে আর বলছে,
‘একটা খাব, দুটো খাব, সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’
এখন হয়েছে কি-সেই গাছে সাতটা ভূত থাকত। জোলা ‘সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব’ বলছে, আর তা শুনে তাদের ত বড্ড ভয় লেগেছে। তারা সাতজনে গুটিগুটি হয়ে কাঁপছে, আর বলছে,‘ওরে সর্বনাশ হয়েছে! ঐ দেখ, কেত্থেকে এক বিটকেল ব্যাটা এসেছে, আর বলছে আমাদের সাতজনকেই চিবিয়ে খাবে! এখন কি করি বল্ ত! অনেক ভেবে তারা একটা হাঁড়ি নিয়ে জোলার কাছে এল। এসে জোড়হাত করে তাকে বলল, ‘দোহাই কর্তা! আমাদের চিবিয়ে খাবেন না। আপনাকে এই হাঁড়িটি দিচ্ছি, এইটি নিয়ে আমাদের ছেড়ে দিন।’
সাতটা মিশমিশে কালো তালগাছপানা ভূত, তাদের কুলোর মত কান, মুলোর মত দাঁত, চুলোর মত চোখ-তারা জোলার সামনে এসে কাঁইমাই করে কথা বলছে দেখেই ত সে এমনি চমকে গেল যে, সেখান থেকে ছুটে পালাবার কথা তার মনেই এল না। সে বলল, ‘হাঁড়ি নিয়ে আমি কি করব?’
ভূতেরা বলল, ‘আজ্ঞে, আপনার যখন যা খেতে ইচ্ছে হবে, তাই এই হাঁড়ির ভিতর পাবেন।’
জোলা বলল, ‘বটে! আচ্ছা পায়েস খাব।’
বলতে বলতেই সেই হাঁড়ির ভিতর থেকে চমৎকার পায়েসের গন্ধ বেরুতে লাগল। তেমন পায়েস জোল কখনো খায় নি, তার মাও খায় নি, তার বাপও খায় নি। কাজেই জোলা যার-পর-নাই খুশি হয়ে হাঁড়ি নিয়ে সেখান থেকে চলে এল, আর ভূতেরা ভাবল, ‘বাবা! বড্ড বেঁচে গিয়েছি।’
তখন বেলা অনেক হয়েছে, আর জোলার বাড়ি সেখান থেকে ঢের দূরে। তাই জোলা ভাবল, ‘এখন এই রোদে কি করে বাড়ি যাব? বন্ধুর বাড়ি কাছে আছে, এবেলা সেইখানে যাই। তারপর বিকেলে বাড়ি যাব এখন।’
বলে সে তার বন্ধুর বাড়ি এসেছে। সে হতভাগা কিন্তু ছিল দুষ্টু। সে জোলার হাঁড়িটি দেখে জিজ্ঞাসা করল, হাঁড়ি কোত্থেকে আনলি রে।’
জোলা বলল, ‘বন্ধু, এ যে-সে হাঁড়ি নয়, এর ভারি গুণ।’
বন্ধু বলল ‘বটে? আচ্ছা দেখি ত কেমন গুণ।’
জোলা বলল, ‘তুমি যা খেতে চাও, তাই আমি এর ভিতর থেকে বার করতে পারি।’
বন্ধু বলল, ‘আমি রাবড়ি, সন্দেশ, রসগোল্লা, সরভাজা, মালপুয়া, পাস্তুয়া, কাঁচাগোল্লা, ক্ষীরমোহন, গজা, মতিচুর জিলিপি, অমৃতি, চমচম এইসব খাব।’
জোলার বন্ধু যা বলছে, জোলা হাঁড়ি ভিতর হাত দিয়ে তাই বার করে আনছে। এ-সব দেখে তার বন্ধু ভাল যে, এ জিনিসটি চুরি না করলে হচ্ছে না।
তখন জোলাকে কতই আদর করতে লাগল! পাখা এনে তাকে হাওয়া করল, গামছা দিয়ে তার মুখ মুছিয়ে দিল, আর বলল, ‘আহা ভাই, তোমার কি কষ্টই হয়েছে! গা দিয়ে ঘাম বয়ে পড়েছে! একটু ঘুমোবে ভাই? বিছানা করে দেব?’
সত্যি সত্যি জোলার তখন ঘুব পেয়েছিল। কাজেই সে বলল, ‘আচ্ছা বিছানা করে দাও।’ তখন তার বন্ধু বিছানা করে তাকে ঘুম পাড়িয়ে, তার হাঁড়িটি বদ্লে তার জায়গায় ঠিক তেমনি ধরনের আর একটা হাঁড়ি রেখে দিল। জোলা তার কিছুই জানে না, সে বিকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ি চলে এসেছে আর তার মাকে বলছে, ‘দেখো মা, কি চমৎকার একটা হাঁড়ি এনেছি। তুমি কি খাবে, মা? সন্দেশ খাবে? পিঠে খাবে? দেখো আমি এর ভিতর থেকে সে-সব বার করে দিচ্ছি।’
কিন্তু এ ত আর সে হাঁড়ি নয়, এর ভিতর থেকে সে-সব জিনিস বেরুবে কেন? মাঝখান থেকে জোলা বোকা ব’নে গেল, তার মা তাকে বকতে লাগল।
তখন ত জোলার বড্ড রাগ হয়েছে, আর সে ভাবছে, ‘সেই ভূত ব্যাটাদেরই এ কাজ।’ তার বন্ধু যে তাকে ঠকিয়েছে, এ কথা তার মনেই হল না।
কাজেই পরদিন সে আবার সেই বটগাছতলায় গিয়ে বলতে লাগল,
‘একটা খাব, দুটো খাব, সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’
তা শুনে আবার ভূতগুলো কাঁপতে কাঁপতে একটা ছাগল নিয়ে এসে তাকে হাত জোড় করে বলল, ‘মশাই গো! আপনার পায়ে পড়ি, এই ছাগলটা নিয়ে যান। আমাদের ধরে খাবেন না।’
জোলা বলল, ‘ছাগলের কি গুণ?’
ভূতরা বলল, ‘ওকে সুড়সুড়ি দিয়ে ও হাসে, আর ও মুখ দিয়ে খালি মোহর পড়ে।’
অমনি জোলা ছাগলের গায়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগল। আর ছাগলটাও ‘হিহি হিহি’ করে হাসতে লাগল, আর মুখ দিয়ে ঝর ঝর করে খালি মোহর পড়তে লাগল। তা দেখে জোলার মুখে ত আর হাসি ধরে না। সে ছাগাল নিয়ে ভাবল যে, এ জিনিস বন্ধুকে না দেখালেই নায়।
সেদিন তার বন্ধু তাকে আরো ভাল বিছানা করে দিয়ে দুহাতে দই পাখা দিয়ে হাওয়া করল। জোলার ঘুমও হল তেমনি। সেদিন আর সন্ধ্যার আগে তার ঘুম ভাঙল না। তার বন্ধু ত এর মধ্যে কখন তার ছাগল চুরি করে তার জায়গয় আর-একটা ছাগল রেখে দিয়েছে।
সন্ধ্যার পর জোলা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে তার বন্ধুর সেই ছাগলটা নিয়ে বাড়ি এল। এসে দেখল, যে তার মা তার দেরি দেখে ভারি চটে আছে। তা দেখে সে বলল, ‘রাগ আর করতে হবে না, মা। আমার ছাগলের গুণ দেখলে খুমি হয়ে নাচবে!’ বলেই সে ছাগলের বগলে আঙুল দিয়ে বলল, ‘কাতু কুতু কুতু কুতু কুতু!!!’
ছাগল কিন্ত তাতে হাসলো না, তার মুখ দিযে মোহরও বেরুল না। জোলা আবার তাকে সুড়সুড়ি দিলে বলল, ‘কাতু কুতু কুতু কুতু কুতু কুতু কুতু কুতু!!’
তখন সেই ছাগল রেগে গিয়ে শিং বাগিয়ে তার নাকে অমনি বিষম গুঁতো মারল যে, সে চিত হয়ে পড়ে চেঁচাতে লাগল। আর তার নাক দিয়ে রক্তও পড়ল প্রায় আধ সের তিন পোয়া। তার উপর আবার তার মা তাকে এমনি বকুনি দিল যে, তেমন বকুনি সে আর খায় নি।
তাতে জোলার রাগ যে হল, সে আর কি বলব! সে আবার সেই বটগাছতলায় গিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগল,
‘একটা খাব, দুটো খাব, সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’
‘বেটারা আমাকে দুবার ফাঁকি দিয়েছিস, ছাগল দিয়ে আমার নাক থেঁতলা করে দিয়েছিস-আজ আর তোদের ছাড়ছি নে!’
ভূতেরা তাতে ভারি আশ্চর্য হয়ে বলল, সে কি মশাই, আমার কি করে আপনাকে ফাঁকি দিলুম, আর ছাগল দিয়েই বা কিরে আপনার নাক থেঁতলা করলুম?’
জোলা তার নাক দেখিয়ে বলল, ‘এই দেখ না, গুঁতো মেরে সে আমার কি দশা করেছ। তোদের সব কটাকে চিবিয়ে খাব!’
ভূতেরা বলল, ‘সে কখনো আমাদের ছাগল নয়। আপনি কি এখান থেকে সোজাসুজি বাড়ি গিয়েছিলেন?’
জোলা বলল, ‘না, আগে বন্ধুর ওখানে গিয়েছিলুম।সেখানে খানিক ঘুমিয়ে তারপর বাড়ি গিয়েছিলুম।’
ভূতেরা বলল, ‘তবেই ত হছেয়ে! আপনি যখন ঘুমোচ্ছিলেন, সেই সময় আপনার বন্ধু আপনার ছাগল চুরি করেছে।’ একথা শুনেই জোলা সব বুঝতে পারল। সে বলল, ‘ঠিক ঠিক। সে বেটাই আমার হাঁড়ি চুরি করেছে। এখন কি হবে?’
ভূতেরা তাকে একগাছি লাঠি দিয়ে বলল, ‘এই লাঠি আপনার হাঁড়িও এনে দেবে, ছাগলও এনে দেবে। ওকে শুধু একটিবার আপনার বন্ধুর কাছে নিয়ে বলবেন, ‘লাঠি লাগ। ত!’ তা হলে দেখবেন, কি মজা হবে! লাখ লোক ছুটে এলেও এ লাঠির সঙ্গে পারবে না, লাঠি তাদের সকলকে পিটে ঠিক করে দেবে।’
জোলা তখন সেই লাঠিটি বগলে করে তার বন্ধুর গিয়ে বলল, ‘বন্ধু, একটা মজা দেখবে?’
বন্ধু ত ভেবেছে, না জানি কি মজা হবে। তারপর যখন জোলা বলল, ‘লাঠি, লাগ্ ত!’ তখন সে এমনি মজা দেখল, যেমন তার জন্মে আর কখনো দেখে নি। লাঠি তাকে পিটে পিটে তার মাথা থেকে পা অবধি চামড়া তুলে ফেলল। সে ছুটে পালাল, লাঠি তার সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে তাকে পিটতে পিটতে ফিরিয়ে নিয়ে এল। তখন সে কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় করে বলল, ‘তার পায়ে পড়ি ভাই, তোর হাড়ি নে, তোর ছাগল নে আমাকে ছেড়ে দে।’
জোলা বলল, ‘আগে ছাগল আর হাঁড়ি আন্, তবে তোকে ছাড়ব।’
কাজেই বন্ধুমশাই আর করেন? সেই পিটুনি খেতে খেতেই হাঁড়ি আর ছাগল এনে হাজির করলেন। জোলা হাঁড়ি হাতে নিয়ে বলল, ‘সন্দেশ আসুক ত“!’অমনি হাঁড়ি সন্দেশে ভরে গেল। ছাগলকে সুড়সুড়ি দিতে না দিতেই সে হো হো করে হেসে ফেলল, আর তার মুখ দিয়ে চারশোটা মোহর বেরিয়ে পড়ল। তখন সে তার লাঠি, হাঁড়ি আর ছাগল নিয়ে বাড়ি চলে গেল।
এখন আর জোলা গরিব নেই, সে বড়মানষ হয়ে গেছে। তার বাড়ি, তার গাড়ি হাতি-ঘোড়া-খাওয়া-পরা, চাল-চলন, লোকজন সব রাজার মতন। দেশের রাজা তাকে যার পর নাই খাতির করেন, তাকে জিজ্ঞাসা না করে কোন ভারি কাজে হাত দেন না।
এর মধ্যে একদিন হয়েছে কি, আর কোন দেশের এক রাজা হাজার লোকজন নিয়ে এসে সেই দেশ লুটতে লাগল। রাজার সিপাইদের মেরে খোঁড়া করে দিয়েছে, এখন রাজার বাড়ি লুটে কখন তাঁকে ধরে নিয়ে যাবে, তার ঠিক নেই।
রাজামশাই তাড়াতাড়ি জোলাকে ডাকিয়ে বললেন, ভাই, এখন কি করি বল্ ত? বেঁধেই ও নেবে দেখছি।’
জোলা ললর, ‘আপনার কোন ভয় নেই। আপনি চুপ করে ঘরে বসে থাকুন, আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি।’
বলেই সে তার লাঠিটি বগলে করে রাজার সিংহদরজার বাইরে গিয়ে চুপ ক’রে বসে রইল। বিদেশী রাজা লুটতে লুটতে সেই দিকেই আসছে, তার সিপাই আর হাতি ঘোড়ার গোলমালে কানে তালা লাগছে, ধুলোয় আকাশ ছেয়ে গিয়েছে। জোলা খালি চেয়ে দেখছে, কিছু বলে না।
বিদেশী রাজা পাহাড়ের মতন এক হাতি চড়ে সকলের আগে আগে আসছে, আর ভাবছে, সব লুটে নেবে। আর, জোলা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে, আর একটু কাছে এলেই হয়।
তারপর তারা যেই কাছে এসেছে, অমনি জোলা তার লাঠিকে বলল, ‘লাঠি, লাগ্ ত।’ আর যাবে কোথায়? তখনি এক লাঠি লাখ লাখ হয়ে রাজা আর তার হাতি- ঘোড়া সকলের ঘাড়ে গিয়ে পড়ল্ আর পিটুনি যে কেমন দিল, সে যারা সে পিটুনি খেয়েছিল তারাই বলতে পারে।
পিটুনি খেয়ে রাজা চেঁচাতে চেঁচাতে বলল, ‘আর না বাবা, আমাদের ঘাট হয়েছে, এখন ছেড়ে দাও, আমরা দেশে চলে যাই।’
জোলা কিছু বলে না, খালি চুপ করে চেয়ে দেখছে আর একটু একটু হাসছে।
শেষে রাজা বলল, ‘তোমাদের যা লুটেছি, সব ফিরিয়ে দিচ্ছি, আমার রাজ্য দিচ্ছি, দোহই বাবা, ছেড়ে দাও।’
তখন জোলা গিয়ে তার রাজাকে বলল, ‘রাজামশাই, সব ফিরিয়ে দেবে বলছে, আর তাদের রাজ্যও আপনাকে দেবে বলছে, আর বলছে, দোহাই বাবা, ছেড়ে দাও। এখন কি হুকুম হয়?’
রাজামহাশয়ের কথায জোলা তার লাঠি থামিযে দিলে। তারপর বিদেশী রাজা কাঁদতে কাঁদতে এসে রাজামশাইয়ের পায়ে পড়ে মাপ চাইল।
রাজামশাই জোলাকে দেখিয়ে বললেন,‘ আর এই লোকটিকে যদি তোমার অর্ধেক রাজ্য দাও, আর তার সঙ্গে তোমার মেয়ের বিয়ে দাও, তা হলে তোমার মাপ করব।’
সে ত তার সব রাজ্যই দিতে চেয়েছিল। কাজেই জোলাকে তার অর্ধেক রাজ্য আর মেয়ে দিতে তখনি রাজি হল।
তারপর জোলা সেই অর্ধেক রাজ্যের রাজা হল,আর রাজার মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হল। আর ভোজের কি যেমন তেমন ঘটা হল! সে ভোজ খেয়ে যদি তারা শেষ করতে না পেরে থাকে, তবে হয়ত এখনো খাচেছ। সেখানে একবার যেতে পারলে হত।
একদিন সে তার মাকে বলল, ‘মা, আমার বড্ড পিঠে খেতে ইচ্ছে করছে,আমাকে পিঠে করে দাও।’
সেইদিন তার মা তাকে লাল-লাল, গোল-গোল, চ্যাপটা-চ্যাপটা সাতখানি চমৎকার পিঠে করে দিল। জোলা সেই পিঠে পেয়ে ভারি খুশি হয়ে নাচতে লাগল আর বলতে লাগল,
‘একটা খাব, দুটো খাব, সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’
জোলার মা বলল, ‘খালি নাচবিই যদি, তবে খাবি কখন?’
জোলা বলল, ‘খাব কি এখানে? সবাই যেখানে দেখতে পাবে, সেখানে গিয়ে খাব।’ ব’লে জোলা পিঠেগুলি নিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি থেকে গেল, বলতে লাগল,
‘একটা খাব, দুটো খাব, সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’
নাচতে নাচতে জোলা একেবারে সেই বটগাছতলায় চলে এল, যেখানে হাট হয়। সেই গাছের তলায় এসে সে খালি নাচছে আর বলছে,
‘একটা খাব, দুটো খাব, সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’
এখন হয়েছে কি-সেই গাছে সাতটা ভূত থাকত। জোলা ‘সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব’ বলছে, আর তা শুনে তাদের ত বড্ড ভয় লেগেছে। তারা সাতজনে গুটিগুটি হয়ে কাঁপছে, আর বলছে,‘ওরে সর্বনাশ হয়েছে! ঐ দেখ, কেত্থেকে এক বিটকেল ব্যাটা এসেছে, আর বলছে আমাদের সাতজনকেই চিবিয়ে খাবে! এখন কি করি বল্ ত! অনেক ভেবে তারা একটা হাঁড়ি নিয়ে জোলার কাছে এল। এসে জোড়হাত করে তাকে বলল, ‘দোহাই কর্তা! আমাদের চিবিয়ে খাবেন না। আপনাকে এই হাঁড়িটি দিচ্ছি, এইটি নিয়ে আমাদের ছেড়ে দিন।’
সাতটা মিশমিশে কালো তালগাছপানা ভূত, তাদের কুলোর মত কান, মুলোর মত দাঁত, চুলোর মত চোখ-তারা জোলার সামনে এসে কাঁইমাই করে কথা বলছে দেখেই ত সে এমনি চমকে গেল যে, সেখান থেকে ছুটে পালাবার কথা তার মনেই এল না। সে বলল, ‘হাঁড়ি নিয়ে আমি কি করব?’
ভূতেরা বলল, ‘আজ্ঞে, আপনার যখন যা খেতে ইচ্ছে হবে, তাই এই হাঁড়ির ভিতর পাবেন।’
জোলা বলল, ‘বটে! আচ্ছা পায়েস খাব।’
বলতে বলতেই সেই হাঁড়ির ভিতর থেকে চমৎকার পায়েসের গন্ধ বেরুতে লাগল। তেমন পায়েস জোল কখনো খায় নি, তার মাও খায় নি, তার বাপও খায় নি। কাজেই জোলা যার-পর-নাই খুশি হয়ে হাঁড়ি নিয়ে সেখান থেকে চলে এল, আর ভূতেরা ভাবল, ‘বাবা! বড্ড বেঁচে গিয়েছি।’
তখন বেলা অনেক হয়েছে, আর জোলার বাড়ি সেখান থেকে ঢের দূরে। তাই জোলা ভাবল, ‘এখন এই রোদে কি করে বাড়ি যাব? বন্ধুর বাড়ি কাছে আছে, এবেলা সেইখানে যাই। তারপর বিকেলে বাড়ি যাব এখন।’
বলে সে তার বন্ধুর বাড়ি এসেছে। সে হতভাগা কিন্তু ছিল দুষ্টু। সে জোলার হাঁড়িটি দেখে জিজ্ঞাসা করল, হাঁড়ি কোত্থেকে আনলি রে।’
জোলা বলল, ‘বন্ধু, এ যে-সে হাঁড়ি নয়, এর ভারি গুণ।’
বন্ধু বলল ‘বটে? আচ্ছা দেখি ত কেমন গুণ।’
জোলা বলল, ‘তুমি যা খেতে চাও, তাই আমি এর ভিতর থেকে বার করতে পারি।’
বন্ধু বলল, ‘আমি রাবড়ি, সন্দেশ, রসগোল্লা, সরভাজা, মালপুয়া, পাস্তুয়া, কাঁচাগোল্লা, ক্ষীরমোহন, গজা, মতিচুর জিলিপি, অমৃতি, চমচম এইসব খাব।’
জোলার বন্ধু যা বলছে, জোলা হাঁড়ি ভিতর হাত দিয়ে তাই বার করে আনছে। এ-সব দেখে তার বন্ধু ভাল যে, এ জিনিসটি চুরি না করলে হচ্ছে না।
তখন জোলাকে কতই আদর করতে লাগল! পাখা এনে তাকে হাওয়া করল, গামছা দিয়ে তার মুখ মুছিয়ে দিল, আর বলল, ‘আহা ভাই, তোমার কি কষ্টই হয়েছে! গা দিয়ে ঘাম বয়ে পড়েছে! একটু ঘুমোবে ভাই? বিছানা করে দেব?’
সত্যি সত্যি জোলার তখন ঘুব পেয়েছিল। কাজেই সে বলল, ‘আচ্ছা বিছানা করে দাও।’ তখন তার বন্ধু বিছানা করে তাকে ঘুম পাড়িয়ে, তার হাঁড়িটি বদ্লে তার জায়গায় ঠিক তেমনি ধরনের আর একটা হাঁড়ি রেখে দিল। জোলা তার কিছুই জানে না, সে বিকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ি চলে এসেছে আর তার মাকে বলছে, ‘দেখো মা, কি চমৎকার একটা হাঁড়ি এনেছি। তুমি কি খাবে, মা? সন্দেশ খাবে? পিঠে খাবে? দেখো আমি এর ভিতর থেকে সে-সব বার করে দিচ্ছি।’
কিন্তু এ ত আর সে হাঁড়ি নয়, এর ভিতর থেকে সে-সব জিনিস বেরুবে কেন? মাঝখান থেকে জোলা বোকা ব’নে গেল, তার মা তাকে বকতে লাগল।
তখন ত জোলার বড্ড রাগ হয়েছে, আর সে ভাবছে, ‘সেই ভূত ব্যাটাদেরই এ কাজ।’ তার বন্ধু যে তাকে ঠকিয়েছে, এ কথা তার মনেই হল না।
কাজেই পরদিন সে আবার সেই বটগাছতলায় গিয়ে বলতে লাগল,
‘একটা খাব, দুটো খাব, সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’
তা শুনে আবার ভূতগুলো কাঁপতে কাঁপতে একটা ছাগল নিয়ে এসে তাকে হাত জোড় করে বলল, ‘মশাই গো! আপনার পায়ে পড়ি, এই ছাগলটা নিয়ে যান। আমাদের ধরে খাবেন না।’
জোলা বলল, ‘ছাগলের কি গুণ?’
ভূতরা বলল, ‘ওকে সুড়সুড়ি দিয়ে ও হাসে, আর ও মুখ দিয়ে খালি মোহর পড়ে।’
অমনি জোলা ছাগলের গায়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগল। আর ছাগলটাও ‘হিহি হিহি’ করে হাসতে লাগল, আর মুখ দিয়ে ঝর ঝর করে খালি মোহর পড়তে লাগল। তা দেখে জোলার মুখে ত আর হাসি ধরে না। সে ছাগাল নিয়ে ভাবল যে, এ জিনিস বন্ধুকে না দেখালেই নায়।
সেদিন তার বন্ধু তাকে আরো ভাল বিছানা করে দিয়ে দুহাতে দই পাখা দিয়ে হাওয়া করল। জোলার ঘুমও হল তেমনি। সেদিন আর সন্ধ্যার আগে তার ঘুম ভাঙল না। তার বন্ধু ত এর মধ্যে কখন তার ছাগল চুরি করে তার জায়গয় আর-একটা ছাগল রেখে দিয়েছে।
সন্ধ্যার পর জোলা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে তার বন্ধুর সেই ছাগলটা নিয়ে বাড়ি এল। এসে দেখল, যে তার মা তার দেরি দেখে ভারি চটে আছে। তা দেখে সে বলল, ‘রাগ আর করতে হবে না, মা। আমার ছাগলের গুণ দেখলে খুমি হয়ে নাচবে!’ বলেই সে ছাগলের বগলে আঙুল দিয়ে বলল, ‘কাতু কুতু কুতু কুতু কুতু!!!’
ছাগল কিন্ত তাতে হাসলো না, তার মুখ দিযে মোহরও বেরুল না। জোলা আবার তাকে সুড়সুড়ি দিলে বলল, ‘কাতু কুতু কুতু কুতু কুতু কুতু কুতু কুতু!!’
তখন সেই ছাগল রেগে গিয়ে শিং বাগিয়ে তার নাকে অমনি বিষম গুঁতো মারল যে, সে চিত হয়ে পড়ে চেঁচাতে লাগল। আর তার নাক দিয়ে রক্তও পড়ল প্রায় আধ সের তিন পোয়া। তার উপর আবার তার মা তাকে এমনি বকুনি দিল যে, তেমন বকুনি সে আর খায় নি।
তাতে জোলার রাগ যে হল, সে আর কি বলব! সে আবার সেই বটগাছতলায় গিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগল,
‘একটা খাব, দুটো খাব, সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’
‘বেটারা আমাকে দুবার ফাঁকি দিয়েছিস, ছাগল দিয়ে আমার নাক থেঁতলা করে দিয়েছিস-আজ আর তোদের ছাড়ছি নে!’
ভূতেরা তাতে ভারি আশ্চর্য হয়ে বলল, সে কি মশাই, আমার কি করে আপনাকে ফাঁকি দিলুম, আর ছাগল দিয়েই বা কিরে আপনার নাক থেঁতলা করলুম?’
জোলা তার নাক দেখিয়ে বলল, ‘এই দেখ না, গুঁতো মেরে সে আমার কি দশা করেছ। তোদের সব কটাকে চিবিয়ে খাব!’
ভূতেরা বলল, ‘সে কখনো আমাদের ছাগল নয়। আপনি কি এখান থেকে সোজাসুজি বাড়ি গিয়েছিলেন?’
জোলা বলল, ‘না, আগে বন্ধুর ওখানে গিয়েছিলুম।সেখানে খানিক ঘুমিয়ে তারপর বাড়ি গিয়েছিলুম।’
ভূতেরা বলল, ‘তবেই ত হছেয়ে! আপনি যখন ঘুমোচ্ছিলেন, সেই সময় আপনার বন্ধু আপনার ছাগল চুরি করেছে।’ একথা শুনেই জোলা সব বুঝতে পারল। সে বলল, ‘ঠিক ঠিক। সে বেটাই আমার হাঁড়ি চুরি করেছে। এখন কি হবে?’
ভূতেরা তাকে একগাছি লাঠি দিয়ে বলল, ‘এই লাঠি আপনার হাঁড়িও এনে দেবে, ছাগলও এনে দেবে। ওকে শুধু একটিবার আপনার বন্ধুর কাছে নিয়ে বলবেন, ‘লাঠি লাগ। ত!’ তা হলে দেখবেন, কি মজা হবে! লাখ লোক ছুটে এলেও এ লাঠির সঙ্গে পারবে না, লাঠি তাদের সকলকে পিটে ঠিক করে দেবে।’
জোলা তখন সেই লাঠিটি বগলে করে তার বন্ধুর গিয়ে বলল, ‘বন্ধু, একটা মজা দেখবে?’
বন্ধু ত ভেবেছে, না জানি কি মজা হবে। তারপর যখন জোলা বলল, ‘লাঠি, লাগ্ ত!’ তখন সে এমনি মজা দেখল, যেমন তার জন্মে আর কখনো দেখে নি। লাঠি তাকে পিটে পিটে তার মাথা থেকে পা অবধি চামড়া তুলে ফেলল। সে ছুটে পালাল, লাঠি তার সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে তাকে পিটতে পিটতে ফিরিয়ে নিয়ে এল। তখন সে কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় করে বলল, ‘তার পায়ে পড়ি ভাই, তোর হাড়ি নে, তোর ছাগল নে আমাকে ছেড়ে দে।’
জোলা বলল, ‘আগে ছাগল আর হাঁড়ি আন্, তবে তোকে ছাড়ব।’
কাজেই বন্ধুমশাই আর করেন? সেই পিটুনি খেতে খেতেই হাঁড়ি আর ছাগল এনে হাজির করলেন। জোলা হাঁড়ি হাতে নিয়ে বলল, ‘সন্দেশ আসুক ত“!’অমনি হাঁড়ি সন্দেশে ভরে গেল। ছাগলকে সুড়সুড়ি দিতে না দিতেই সে হো হো করে হেসে ফেলল, আর তার মুখ দিয়ে চারশোটা মোহর বেরিয়ে পড়ল। তখন সে তার লাঠি, হাঁড়ি আর ছাগল নিয়ে বাড়ি চলে গেল।
এখন আর জোলা গরিব নেই, সে বড়মানষ হয়ে গেছে। তার বাড়ি, তার গাড়ি হাতি-ঘোড়া-খাওয়া-পরা, চাল-চলন, লোকজন সব রাজার মতন। দেশের রাজা তাকে যার পর নাই খাতির করেন, তাকে জিজ্ঞাসা না করে কোন ভারি কাজে হাত দেন না।
এর মধ্যে একদিন হয়েছে কি, আর কোন দেশের এক রাজা হাজার লোকজন নিয়ে এসে সেই দেশ লুটতে লাগল। রাজার সিপাইদের মেরে খোঁড়া করে দিয়েছে, এখন রাজার বাড়ি লুটে কখন তাঁকে ধরে নিয়ে যাবে, তার ঠিক নেই।
রাজামশাই তাড়াতাড়ি জোলাকে ডাকিয়ে বললেন, ভাই, এখন কি করি বল্ ত? বেঁধেই ও নেবে দেখছি।’
জোলা ললর, ‘আপনার কোন ভয় নেই। আপনি চুপ করে ঘরে বসে থাকুন, আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি।’
বলেই সে তার লাঠিটি বগলে করে রাজার সিংহদরজার বাইরে গিয়ে চুপ ক’রে বসে রইল। বিদেশী রাজা লুটতে লুটতে সেই দিকেই আসছে, তার সিপাই আর হাতি ঘোড়ার গোলমালে কানে তালা লাগছে, ধুলোয় আকাশ ছেয়ে গিয়েছে। জোলা খালি চেয়ে দেখছে, কিছু বলে না।
বিদেশী রাজা পাহাড়ের মতন এক হাতি চড়ে সকলের আগে আগে আসছে, আর ভাবছে, সব লুটে নেবে। আর, জোলা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে, আর একটু কাছে এলেই হয়।
তারপর তারা যেই কাছে এসেছে, অমনি জোলা তার লাঠিকে বলল, ‘লাঠি, লাগ্ ত।’ আর যাবে কোথায়? তখনি এক লাঠি লাখ লাখ হয়ে রাজা আর তার হাতি- ঘোড়া সকলের ঘাড়ে গিয়ে পড়ল্ আর পিটুনি যে কেমন দিল, সে যারা সে পিটুনি খেয়েছিল তারাই বলতে পারে।
পিটুনি খেয়ে রাজা চেঁচাতে চেঁচাতে বলল, ‘আর না বাবা, আমাদের ঘাট হয়েছে, এখন ছেড়ে দাও, আমরা দেশে চলে যাই।’
জোলা কিছু বলে না, খালি চুপ করে চেয়ে দেখছে আর একটু একটু হাসছে।
শেষে রাজা বলল, ‘তোমাদের যা লুটেছি, সব ফিরিয়ে দিচ্ছি, আমার রাজ্য দিচ্ছি, দোহই বাবা, ছেড়ে দাও।’
তখন জোলা গিয়ে তার রাজাকে বলল, ‘রাজামশাই, সব ফিরিয়ে দেবে বলছে, আর তাদের রাজ্যও আপনাকে দেবে বলছে, আর বলছে, দোহাই বাবা, ছেড়ে দাও। এখন কি হুকুম হয়?’
রাজামহাশয়ের কথায জোলা তার লাঠি থামিযে দিলে। তারপর বিদেশী রাজা কাঁদতে কাঁদতে এসে রাজামশাইয়ের পায়ে পড়ে মাপ চাইল।
রাজামশাই জোলাকে দেখিয়ে বললেন,‘ আর এই লোকটিকে যদি তোমার অর্ধেক রাজ্য দাও, আর তার সঙ্গে তোমার মেয়ের বিয়ে দাও, তা হলে তোমার মাপ করব।’
সে ত তার সব রাজ্যই দিতে চেয়েছিল। কাজেই জোলাকে তার অর্ধেক রাজ্য আর মেয়ে দিতে তখনি রাজি হল।
তারপর জোলা সেই অর্ধেক রাজ্যের রাজা হল,আর রাজার মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হল। আর ভোজের কি যেমন তেমন ঘটা হল! সে ভোজ খেয়ে যদি তারা শেষ করতে না পেরে থাকে, তবে হয়ত এখনো খাচেছ। সেখানে একবার যেতে পারলে হত।
প্রেম ও ভালবাসা
এ্যাই সুন্দরী-
শোন-
তোমাকে দুটি শব্দের কথা বলব-
প্রেম ও ভালবাসা।
তুমি চিন তাদের?-
তোমার ওই কোমল অন্তরে তাদের অবস্থান
তোমার হিজল কালো চোখে তাদের দ্যুতি
অনুধাবন করেছ কি কখনো তাদের?
ভেবে দেখেছ, তারা কি চাই?
আমার আশ্রয়েই তারা পরিপূর্ণতা পাবে
বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস কর তাদের-
বুঝেছ তুমি মেয়ে-
আর শোন-
তোমার অপেক্ষাতেই আমি চেয়ে আছি
রজনীর শেষ ধাপেই শুধু আমার ধৈর্য ভেঙ্গে যাবে।
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
www.ebrahim-mirzapur.blogspot.com
শোন-
তোমাকে দুটি শব্দের কথা বলব-
প্রেম ও ভালবাসা।
তুমি চিন তাদের?-
তোমার ওই কোমল অন্তরে তাদের অবস্থান
তোমার হিজল কালো চোখে তাদের দ্যুতি
অনুধাবন করেছ কি কখনো তাদের?
ভেবে দেখেছ, তারা কি চাই?
আমার আশ্রয়েই তারা পরিপূর্ণতা পাবে
বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস কর তাদের-
বুঝেছ তুমি মেয়ে-
আর শোন-
তোমার অপেক্ষাতেই আমি চেয়ে আছি
রজনীর শেষ ধাপেই শুধু আমার ধৈর্য ভেঙ্গে যাবে।
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
www.ebrahim-mirzapur.blogspot.com
Subscribe to:
Posts (Atom)